শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫, ০২:৫৩ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
লালমনিরহাটে তিনটি গ্রামকে মাদক মুক্ত এলাকা ঘোষণা করলো “শাহীন সচেতনতার প্লাটফর্ম” রূপগঞ্জে জলাবদ্ধতা নিরসনে বেদখল সরকারি খাল উদ্ধার চুনারুঘসটে ভাগিনার হাতে মামা খুন ভোলাগঞ্জ পাথর লুট ও টাঙ্গুয়ার হাওরে অপরিকল্পিত পর্যটনের প্রতিবাদে সুনামগঞ্জে সমাবেশ চাঁদাবাজিতে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই: আসিফ মাহমুদ বীমা আইন লংঘন করে তাকাফুলে একই পরিবারের তিন পরিচালক নন-লাইফ বীমা খাতের উন্নয়ন বিষয়ক কিছু ভাবনা শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা দ্বিগুণ হচ্ছে এক হাজার ৩২২ কোটি টাকার মাদক ধ্বংস করল বিজিবি জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : প্রধান উপদেষ্টা
ছেলে বিসিএস ক্যাডার, একা ঘরে মা’কে উদ্ধার করা হলো মলমূত্র থেকে

ছেলে বিসিএস ক্যাডার, একা ঘরে মা’কে উদ্ধার করা হলো মলমূত্র থেকে

ডেস্ক নিউজঃ ২০ বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছেন ফেনীর মধুপুরের মৃদুল সাহা। এরপর একে একে তাকে ছেড়ে গেছে শিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত পাঁচ সন্তান। গেল চার বছর ধরে কার্যত মায়ের খোঁজ রাখেনি কেউই। নিঃসঙ্গ বাড়িতে স্মৃতি আকড়ে কেটেছে অভাগা জননীর একাকী জীবন। অবশেষে তাকে মৃত্যুর মুখ থেকে উদ্ধার করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

নির্জন বাড়িতে ৮০ বছরের বৃদ্ধা মা। বিসিএস ক্যাডার ও ধন্যাঢ্য ব্যবসায়ী দুই ছেলে থাকেন পরিবার নিয়ে যার যার নিজ নিজ বাসা-বাড়িতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নেয়া মেয়ে থাকেন স্বামীর বাড়ি। আর মায়ের স্থান হয়েছে গ্রামের একটি বাড়িতে। সেখানে তাকে দেখার কেউ নেই। বয়োবৃদ্ধ এই নারী অসুস্থ অবস্থায় পড়ে থাকেন বিছানায়। অনেক সময় লেপটে থাকেন নিজের মূলমূত্রের মাঝেই।

মঙ্গলবার বিকেলে ফেনী পৌরসভার ১৫ নং ওয়ার্ড মধুপুর থেকে মৃদুল সাহা নামের এই বৃদ্ধা মা’কে উদ্ধার করেছে পুলিশ। কক্সবাজার থেকে বিসিএস ক্যাডার ছেলের দেয়া খবরে পুলিশ ও স্থানীয় কাউন্সিলর লাশ উদ্ধার করতে গিয়ে দেখেন তিনি এখনও জীবিত। নিজের মল-মূত্রের মাঝে ডুবে আছেন।

ফেনী পৌরসভার ১৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবু ইউছুফ ভূঁইয়া বাদল জানান, বৃদ্ধার মেজ ছেলে সুশান্ত সাহা কক্সবাজার থেকে ফোন দিয়ে জানিয়েছেন, তার মা ঘরে মারা গেছেন, সেখান থেকে তার মায়ের লাশ উদ্ধার করা লাগবে। পরে তিনি পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘরের দরজা ভেঙে তাকে জীবিত উদ্ধার করেন।

স্থানীয় বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ, নয়ন ও সোহাগ আক্ষেপ করে বলেন, মাকে রেখে বিলাসী জীবন যাপন করেছে মৃদুল সাহার পাঁচ ছেলে-মেয়ে। গতকাল এক পর্যায়ে মেয়ে শর্বরী সাহা হাসপাতালে এলেও তিনি মায়ের কাছে যাননি। দূর থেকে খবর নেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাকে কিছুক্ষণ আটকে রাখে। উদ্ধারের পর ওই মায়ের চিকিৎসার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে ফেনীর সামাজিক সংগঠন, সিভিল সার্জন ও জেলা পুলিশ।

বাড়ির বাসিন্দা শুভ সাহা জানান, দীর্ঘ ৪ বছর ধরে মধুপুরের ওই বাড়িতে একা থাকেন বৃদ্ধা মা। তার বড় ছেলে বাপ্পি সাহা ও বিপুল সাহা ফেনী শহরের চালের আড়তের মালিক। তাদের বাবা হরিপদ সাহার রেখে যাওয়ার চালের আড়তে ব্যবসায়িক কাজে ব্যস্ত থাকায় মায়ের খোঁজ খবর নিতে পারেন না। স্ত্রী-ছেলে মেয়ে নিয়ে অন্য বাসায় থাকেন তারা। অপর ছেলে সুশান্ত সাহা বিসিএস ক্যাডার। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক। থাকেন কক্সবাজারে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা মেয়ে শর্বরী সাহা ও গৃহিনী সুমি সাহা থাকেন তাদের শ্বশুরালয়ে।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে সুশান্ত সাহার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহপাঠি জানান, সুশান্ত অত্যন্ত মানবিক। সে প্রায় সময় তার মায়ের জন্য আফসোস করে। কিন্তু তার স্ত্রীর জন্য মাকে কাছে রাখতে পারে না। ফেনীর সিভিল সার্জন হাসান শাহরিয়ার করিব জানান, বৃদ্ধাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। ৭২ ঘণ্টা পর বলা যাবে তার শারীরিক অবস্থা।

পুলিশ সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ পোদ্দার বাড়ির ওই বৃদ্ধা মাকে উদ্ধার করে। এমন ঘটনায় স্থানীয়রা ঘৃণা জানান উচ্চশিক্ষিত এই পরিবারকে। তিনি আরও জানান, এই বৃদ্ধা মাকে সন্তাররা অবহেলা করে মেরে ফেলার পাঁয়তারা করছিল কি-না তা দেখা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বৃদ্ধার মেজ ছেলে সুশান্ত সাহার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমাদের তিন ভাইয়ের বউরা কেউ মা’কে রাখতে চায়না। সেজন্য রাখতে পারিনি। তবে মা-ও গ্রামের বাড়িতে থাকতে চান।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com